ভাগ্যের পরিহাস
সরকারী হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বেডের রোগীর কন্ঠে
চেনা গান শুনে মালতীর এক ঝটকায় মাথাটা টলে গেল। আজকে থেকে এই ঘরেই ওর ডিউটি। চেনা
নামটাও জ্বলজ্বল করছে ওষুধ লেখা চার্টটাতে। লোকটি মালতীকে দেখে গান থামিয়ে বলে
উঠল- "সিস্টার, আমি ভাল হয়ে বাড়ি ফিরতে পারব তো?"
চেনা চোখের দিকে তাকিয়ে মালতীর বুকে সহস্র বীণার
ঝঙ্কার। প্রত্যুত্তরে "পারবেন" বলে ওষুধ দিতে লাগল মালতী। মাস্ক পরা
মালতীকে রোগী ভদ্রলোক চিনতে না পারলেও মালতী কী করেই বা তাঁকে ভুলবে? বিধাতার
নির্মম পরিহাসে পঁচিশ বছর পর আবার রজতের সঙ্গে দেখা। রজত করোনায় আক্রান্ত।
পঞ্চাশের কোটার রজত হার্ট আর সুগারেরও রোগী।পণ নিল মালতী রজতকে বাঁচাবার। যদিও
একদিন এই রজতই মালতীকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। ট্রেনের নিত্যযাত্রী অচেনা
মনিদিই বাঁচিয়েছিল মালতীকে।মনিদির পরামর্শেই নিয়েছিল নার্সের ট্রেনিংপাশ করে
চাকরীও পেল।খালি সংসারটাই আর হয়নি।
দশ বছরের প্রেম এক ঝটকায় ভেঙে দিয়েছিল রজত। এমএ
পড়াকালীন ঠোঁটের কাছে শ্বেতী উঠল মালতীর। মাস ছয়েকের মধ্যে ছড়াল সারা শরীরে। সদ্য
চাকরী পাওয়া রজতও গায়ে শ্বেতী মালতীর থেকে মুখ ফিরিয়ে তাড়াহুড়ো করে বিজ্ঞাপনে দেখা
পাত্রীকে বিয়ে করেছিল।
দিনরাত সেবা করছে মালতী। একমাস ধরে সেবিকার
নামটা শুনেও মালতীর কথা একবারও রজতের মুখে আসেনি।মনিদি এসে জানাল, বাড়ি ফেরার
সময় সারা হাসপাতাল মালতীকে খুঁজছিল রজত, কৃতজ্ঞতা জানাতে। হাসপাতালের বেডে শোয়া
মালতীর দুদিন ধরে জ্বর, কাশি। দু'চোখে জলের ধারা, ক্ষীণকন্ঠে গান ধরল মালতী
"বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর
প্রার্থনা,
Comments
Post a Comment