ভগবানের মার
অলংকরণঃ জয়দীপ বসু
একদিন বিকেলে ভগবান বিষ্ণু তাঁর প্রিয় সহচর
নারদকে বগলদাবা করে ছদ্মবেশে ধরাধামে তদারকি করতে পৌঁছালেন দশাশ্বমেধ ঘাটে। গঙ্গা
আরতি হবে একটু বাদেই, ঘাটে তারই প্রস্তুতি চলছে। পাশেই নৌকাঘাট, সেখানেই সিঁড়িতে
ধপ করে বসে পড়লেন দুজনে। নৌকাঘাটের সামনে তিনটে উলঙ্গ শিশু কাদা আর জল
ছিটিয়ে চান করছে। সেদিকে তাকিয়েই বিষ্ণু বললেন,
“নারদ?”
“প্রভু!”
“এটা বিশ্বনাথদার এরিয়া না?”
“হ্যাঁ প্রভু, এটা বড় স্যারের এলাকাই বটে।"
“দেখেছো অবস্থা? এদিকে নাকি দেবাদিদেব, কিন্তু
কাণ্ডকারখানা দেখো! দিনরাত গাঁজা টেনে নাক ডাকাচ্ছে আর এদিকে তার এলাকাতেই লোকের
কিনা এত দুঃখ কষ্ট! বাচ্চাগুলোর গায়ে জামা নেই, রোগাভোগা চেহারা! উফফ! কত দুঃখ
কষ্ট এদের! আমি এক্ষুনি এদের অভাব দূর করে দিতে চাই। আর স্বর্গে গিয়ে দেখাতে চাই
বিশুদার এরিয়ায় কোনো কাজ ঠিক ভাবে হচ্ছে না। ব্রহ্মা স্যারের কাছে রির্পোট জমা
দিতে চাই। দেখি এবার বিশুদা আমাকে ভোটে কিভাবে হারায়।“
কোঁৎ করে ঢোক গিলে নারদ হাঁ হাঁ করে বললেন,
“খবরদার প্রভু! এমনটা করবেন না! বিশ্বনাথ স্যার বিচক্ষণ ভগবান! উনি মানুষকে অভাবের
মধ্যে রেখেছেন নিশ্চই কোনো কারণ আছে!"
“তুমি চুপ করো দেখি! তুমি আমার চামচা না বিশুদার
শুনি?"
এই বলে এগিয়ে গিয়ে ছেলেগুলোকে ডেকে পকেট থেকে
পার্স বার করে একতাড়া নোট থেকে কিছু টাকা ছেলেগুলোকে দিলেন হাতে। ছেলেগুলো খুব
খুশি হয়ে 'কাকু কাকু' বলে জড়িয়ে ধরল বিষ্ণুকে।
বিষ্ণু ফিরে এসে বললেন, “দেখলে? ছেলেগুলোর কতটা
অভাব দুর করে এলাম! পারবে তোমার গাঁজাখোর বিশ্বনাথ দা? আরে নিজের গাঁটেই কড়ি
নেই আবার আসে ভোটে দাঁড়াতে! “
“কিন্ত প্রভু, ছেলেগুলোর অভাব দূর করতে গিয়ে
আপনি যে তাদের স্বভাব নষ্ট করে দিয়ে এলেন! “
“মানে?”
“মানে আপনার কাটা পকেটখানা দেখুন! পার্সটা তো
হাপিস!"
পকেটে হাত ঢুকিয়ে বিষ্ণু ফ্যালফ্যাল করে নারদের
দিকে চাইতেই নারদ বললেন, “বলেছিলুম না, বিশ্বনাথ দা বিচক্ষণ ভগবান!"
Comments
Post a Comment