মায়া

 


লেখাঃ শেলী ভট্টাচার্য

অলংকরণঃ জয়দীপ বসু 


রাত বারোটা হবে। সমস্ত বিল্ডিং নিস্তব্ধ। মিহি বার্তালাপ হচ্ছে দোতলার ফ্ল্যাটটিতে। উপরের ফ্ল্যাটের বাইরে আওয়াজ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দোতলার ফ্ল্যাটের কলিংবেলটা বেজে উঠল।

"রোহিত নাকি?"

"বাড়িতে গিয়েই দুঃসংবাদটা দিয়েছিল ছেলেটা। মনে হয়, মারণ ভাইরাসটাকে হারিয়ে এতদিনে ফিরে এসেছে ..."  স্ত্রীকে কথাগুলো বলে দরজার দিকে এগোল সায়ক।

বাড়িওয়ালা রাত এগারোটায় সিঁড়ির আলোর নিয়ন্ত্রক সুইচটিকে অফ করে দেয়। দরজা খুলে সায়ক দেখল, অস্পষ্ট ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে রোহিত। সায়ক উসখুস করতেই ও বলল, "ঘরের লাইট অন করতে হবে না কাকু। বরং মোবাইলটা নিয়ে একটু আমার সঙ্গে এসো। ফ্ল্যাটের তালাটা খুলতে চাইছিলাম। ফোনের চার্জ শেষ হতেই চাবিটাও পড়ে গেল।"

সিঁড়ির দিকে যেতে যেতেও ফিরে এল রোহিত, "এই নাও, কাকিমার প্রিয় প্যারা সন্দেশ।" 

অন্ধকারের জটলাটা ফোনের আলোতে একটু পরিষ্কার হতেই সিঁড়িতে ওঠার পথে রোহিতকে দেখতে পাচ্ছিল সায়ক।

 *********

 সকালে নিচে নামতেই বাড়িওয়ালার কথায় থমকে দাঁড়াল রোহিত। 

"তুমি বাড়িতে যাওয়ার দিন এঘরেই খেয়েছিলে না? মানুষ দুটো সবাইকে বড্ড স্নেহ করতেন। পরিস্থিতির ফেরে শেষ অবস্থায় কেউ কাছে ছিল না।" 

মলিন কথাগুলোর তাগিদ রোহিতের নজরকে ফেরাল সায়কদের খোলা ফ্ল্যাটের ভেতরে। ওর চোখ পড়ল মিষ্টির আধখোলা প্যাকেটটার উপর। মেঝের এককোণে পড়ে আছে ... খালি।

"আশপাশের লোকেদের অস্বস্তির কথা ভেবেই আজ এই ব্যবস্থা করলাম", বাড়িওয়ালা নীচু স্বরে বলছিলেন। 

রোহিতের ঝাপসা দৃষ্টি তখন হাসিখুশি বৃদ্ধ দম্পতির উপর ... পুজোর আয়োজনের সামনে ... ফটোফ্রেমে।

Comments